চিত্রনাট্য তৈরিই ছিল। গত ১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুরের জনসভায় শুভেন্দু অধিকারীদের সঙ্গেই অমিত শাহর কাছ থেকে গেরুয়া পতাকা হাতে তুলে নেওয়ার কথা ছিল তাঁর। সেই উদ্দেশ্যে আসানসোল থেকে চলেও এসেছিলেন কলকাতায়। কিন্তু তাঁর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বাবুল সুপ্রিয়-সহ গেরুয়া শিবিরের একাংশ। হাওয়া বেগতিক বুঝে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিই আনুগত্য প্রকাশ করে ঘাসফুল শিবিরেই ফিরে এসেছিলেন পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। বলেছিলেন, 'ভুল করে ফেলেছি। দিদির কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব।' কিন্তু সেই আনুগত্য শিকেয় তুলে মঙ্গলবার গেরুয়া জার্সিই গায়ে তুলে নিলেন তিনি।
এ দিন সন্ধ্যায় বৈদ্যবাটির এক দলীয় অনুষ্ঠানে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাত থেকে গেরুয়া পতাকা গ্রহণ করেন জিতেন্দ্র। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভোটের আগে জিতেন্দ্রর বিজেপিতে নাম লেখানো রাজ্যের শাসকদলের কাছে এক বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, যে জিতেন্দ্রকে নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন বাবুল সুপ্রিয়, এ দিন তাঁকেই দলে দু'হাত তুলে স্বাগত জানিয়েছেন আসানসোলের সাংসদ। বস্তুত, জিতেন্দ্রকে দলে নিতে যে আগ্রহী বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তা তাঁর প্রত্যাশিত দল বদল ভেস্তে যাওয়ার পরই বোঝা গিয়েছিল। জিতেন্দ্রকে নিয়ে প্রকাশ্যে আপত্তি তোলায় 'দলের স্বার্থের পরিপন্থী কাজ' করার দায়ে শো-কজ করা হয় রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু ও মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পলকে। বাবুলকেও ডেকে পাঠিয়ে এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন দলের দুই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও শিবপ্রকাশ।
অন্যদিকে, বিজেপি গমন ভেস্তে যাওয়ার পর জিতেন্দ্র তৃণমূল নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলেও তাঁর ছেড়ে দেওয়া আসানসোল পুর প্রশাসক পদ ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতির পদ তাঁকে ফিরিয়ে দেয়নি দল। ফলে দলে থেকেও কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন জিতেন্দ্র। এ দিন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'অনেকেই তো যাচ্ছেন। অনেকেই আবার বিজেপি থেকে আমাদের দলেও আসছেন। কিছু আসে-যায় না। তবে যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁদের একদিন আঙুল চুষতে হবে।'