বরাকে ইস্যু নয় মোগল আক্রমণ
- অরিজিৎ আদিত্য
- - মার্চ ২, ২০২১
মোগল আক্রমণ থেকে গৌতম রায়ের বিজেপিতে যোগদান।সর্বানন্দ সোনোয়ালের সাফল্য থেকে ডি ভোটার ইস্যুতে বিজেপির বাঙালি বিধায়ক-সাংসদের ভূমিকা। সব কিছু নিয়েই বার্তালিপির সঙ্গে বার্তালাপে অকপট শিলচরের সাংসদ ডা: রাজদীপ রায়।
বাৰ্তালিপি : ভোট তো এসে গেল৷ গত পাঁচ বছরে আপনাদের দলের সরকারের কোন কাজগুলোকে সামনে রেখে এবার মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাবেন আপনি?
রাজদীপ : প্ৰথমত, এই সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য মুখ্যমন্ত্ৰী স্বয়ং৷ সৰ্বানন্দ সোনোয়ালের ‘বরাক ব্ৰহ্মপুত্ৰ পাহাড় ভৈয়াম’ শ্লোগান আসলেই সরকারের দৰ্শন৷ দেখুন ব্ৰহ্মপুত্ৰ অনেক বেশি শক্তিশালী, অনেক বেশি সংখ্যক জেলাকে ছুঁয়ে গেছে৷ কিন্তু তারপরও লক্ষ কন, এই শ্লোগানে বরাককে ব্ৰহ্মপুত্ৰের আগে রেখেছেন সোনোয়াল৷ কেন রেখেছেন? রেখেছেন এই কারণেই যে একটি পরিবারে বড় ভাই হিসেবে ছোট ভাইয়ের প্ৰতি যে কতৰ্ব্য, সেটাতেই বিশ্বাস করে এই সরকার৷ সোনোয়াল রাজনীতি শু করেছেন আসুর নেতা হিসাবে৷ তাঁর ভাবমূৰ্তিতে আসু নেতার ছাপটা ছিল৷ কিন্তু বিজেপির মুখ্যমন্ত্ৰীর দায়িত্ব নেওয়ার পর সোনোয়াল আসু সভাপতির ওই তকমার ছায়াকে সযত্নে কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন৷ তিনি এখন জননেতা৷ দুই নম্বর যে সাফল্য নিয়ে আমি মানুষকে বলব, তা হল, উন্নয়ন৷ মুখ্যমন্ত্ৰী গত পাঁচ বছরে মানুষের মনে এই বাৰ্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন যে তাঁর সরকার উন্নয়নে বিশ্বাস করে৷ তিন নম্বর হল, এই সরকারের দুৰ্নীতির বিদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি৷ এপিএসপি থেকে শু করে এসআই পরীক্ষার প্ৰ ফাঁস, প্ৰতিটি ক্ষেত্ৰে সরকার দোষীদের গ্ৰেফতার করেছে৷ ফলে মানুষের মনে এই বিশ্বাস জন্মেছে যে এই সরকার দুৰ্নীতিবাজদের ছেড়ে দেয় না৷ এ ক্ষেত্ৰে সরকার কোনও প্ৰতিহিংসার রাজনীতি করেনি৷ চার নম্বর, ঘুষ না দিয়ে চাকরি৷ এই যে শিক্ষা বিভাগে সত্তর হাজার চাকরি হল, কেউ বলতে পারবে যে সত্তর পয়সাও ঘুষ দিতে হয়েছে? আমার এখনও মনে আছে কংগ্ৰেস আমলে বাড়ির ছেলে বা মেয়ে গ্ৰ্যাজুয়েট হলে বাবা-মায়েরা জমি বিক্রি বা বন্ধক দিয়ে টাকা জোগাড় করতেন, কেন, না চাকরির জন্য ঘুষ দিতে হবে৷ কংগ্ৰেস ঘরানা থেকে মানুষকে বের করে আনার ক্ষেত্ৰে সৰ্বানন্দ সোনোয়ালের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব৷ অসমে এখন মেধার ভিত্তিতে চাকরি হয়৷ মেরোটোক্রেসি, সরকার এটা মানুষের মনে ঢুকিয়ে দিতে সফল হয়েছে৷ আর হ্যাঁ, আরও একটা কথা, সরকারের কয়েকজন মন্ত্ৰীর কথা আমাকে বলতেই হবে৷ বিশেষ করে হিমন্তবিশ্ব শৰ্মার মতো একজন মেধাবী মানুষ যদি সরকারের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হন, তাহলে মুখ্যমন্ত্ৰীর পক্ষেও অনেক কাজ সহজ হয়ে যায়৷ তাঁরা সত্যিই রাম-লক্ষণ জুটি৷
বাৰ্তালিপি : কিন্তু শোনা তো যায়, মুখ্যমন্ত্ৰীর চেয়ার নিয়ে দু’জনের মধ্যে রেষারেষি চলছে৷
রাজদীপ : শুনুন, কোনও মুখ্যমন্ত্ৰী যদি মনে করেন যে অমুক আমার জন্য থ্ৰেট, তাহলে কি সেই মানুষটাকে নয়-নয়টি মন্ত্ৰকের দায়িত্ব দেবেন? আর কোন কোন মন্ত্ৰক? অৰ্থ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পূৰ্ত, সব প্ৰধান মন্ত্ৰক৷ দিয়েছেন তো মুখ্যমন্ত্ৰী? মোদ্দা কথাটা হল, সোনোয়াল হিমন্তবিশ্বকে কাজ করার ফ্ৰি হ্যান্ড দিয়েছেন বলেই তিনি এত কাজ করতে পেরেছেন৷
বাৰ্তালিপি : আপনি মেরিটোক্রেসির কথা বলেছেন৷ কিন্তু বরাকে এমন অভিযোগ শোনা যায় যে এখানকার ছেলেমেয়েদের চাকরি দেওয়া হয় না৷
রাজদীপ : শোনা যায়! মুশলিকটা ওই শোনা যায় নিয়ে৷ বন বিভাগে কিছুদিন আগে চাকরি হল, বরাক থেকে নয়জন হিন্দু বাঙালি ছেলে চাকরি পেয়েছে৷ এপিএসসি-তে লালার মতো একটি পিছিয়ে-পড়া এলাকার একটি মুসলিম সংরক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে ফাৰ্স্ট হয়েছে৷ উধারবন্দের চা বাগান সম্প্ৰদায়ের একটি ছেলে তো মুখ্যমন্ত্ৰীর জেলাতেই ডেপুটি কমিশনার৷ তো বৈষম্যটা হল কই? হ্যাঁ, এমন হতে পারে কোনও একটি চাকরিতে বরাক থেকে আবেদনই কম করা হয়েছিল৷ কিন্তু সোনোয়ালের বিদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ কোনওভাবেই আর আনা যায় না৷
বাৰ্তালিপি : মুখ্যমন্ত্ৰীর সাফল্যের কথা আচ্ছা আমরা মেনেই নিলাম, কিন্তু অভিযোগ ওঠে যে, বরাকের বিধায়কদের যে পারফরম্যান্স দেখানোর কথা ছিল, তাঁরা তা দেখাতে পারেননি৷ তো, বিধায়কদের পারফরম্যান্স নিয়ে আপনার কী ধারণা?
রাজদীপ : দেখুন এ ব্যাপারে আমি কোনও রাজনৈতিক উত্তর দেব না৷ আমি শুধু এটাই বলব, তাঁদের পারফরম্যান্স আমি আমার ব্যক্তিগত একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে যাচাই করব৷ আমি ডাক্তার হতে চেয়েছি, লন্ডন থেকে বড় ডিগ্ৰিও নিয়েছি৷ সাংসদ হিসাবেও আমার একটা একটা স্ট্যান্ডাৰ্ড রয়েছে৷ এখন সবার কাছে তো আমি সেই স্ট্যান্ডাৰ্ড আশা করতে পারি না৷ ফলে বিধায়ক হিসাবে কে পাশ করবেন কে ফেল করবেন, সেটা পাঁচ বছর পর ঠিক করবেন মানুষ৷ আমার মাপকাঠিতে আমি তাঁদের মাপব না, এটুকুই বলব৷
বাৰ্তালিপি : এটা তো খুবই পলিটিক্যালি কারেকট থাকার মতো সাবধানী স্টেটমেন্ট হয়ে গেল৷
রাজদীপ : গেল তো? কী আর করা৷ তবে হ্যাঁ, এ কথাটা আমি বলব, সব দলের বিধায়কদের নিয়েই বলব, যে, হ্যাঁ, আমি বিধানসভায় থাকলে হয়তো আরও একটু বেশি সোচ্চার হতাম৷ বরাকের সমস্যাগুলো আরও বেশি করে তুলতাম৷ এর কারণ কী জানেন, আমি আসলে বিমলাংশু রায়কে বিধানসভায় বিতৰ্কে অংশ নিতে দেখেছি৷ প্ৰথম দিনই তিনি মুখ্যমন্ত্ৰী প্ৰফুল্ল মহন্তকে মুখের ওপর বলে দিয়েছিলেন আগের মতো বৈষম্য যদি সরকারের নীতি হয় তাহলে বরাক কিন্তু পৃথক হয়ে যেতে বাধ্য হবে৷ আমি বিধানসভায় নেই, কিন্তু সোনোয়াল বা হিমন্তবিশ্বকে প্ৰয়োজন পড়লেই আমি বরাকের বিষয় নিয়ে বলি৷ বিধানসভায় থাকলে সেখানে দাঁড়িয়েও বলতাম৷ শাসক দলের বিধায়ক হলেও বলতাম৷
বাৰ্তালিপি : সরকারের যে কয়টি সাফল্যের কথা আপনি বললেন, সেগুলো তো আরও একবার ভোট চাইবার জন্য যথেষ্ট৷ কিন্তু তারপরও কেন আপনারা অন্য দল ভাঙিয়ে নেতাদের নিয়ে আসছেন? কোথাও কোনও ভয় কাজ করছে কি আপনাদের?
রাজদীপ : ভয়-টয় নয়৷ আসলে অনেক সময় জাতিগত সমীকরণ ঠিক রাখার জন্য অন্য দল থেকে কাউকে কাউকে আনতে হয়৷ আমরা যে হেতু রাজনীতি করি ফলে আমরা সব ধ্বনের ভোটারের কাছে পৌছুতে চাই৷ আসলে কী হয়, অনেক সময় কোনও একটি গোষ্ঠী বা উপ-গোষ্ঠীর মধ্যে এরকম একটা ধারণা জন্মে যায় যে বিজেপিতে আমাদের সমাজের প্ৰতিনিধি নেই, ফলে আমাদের কথা কীভাবে পৌছুবে? তো, ওইসব সমীকরণ থেকেই অনেক সময় অন্য দল থেকে নেতাদের আনা হয়৷ তবে হ্যাঁ, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বিজেপি এখন যে অবস্থানে আছে তাতে অন্য দল থেকে নেতাদের না আনলেও চলতো৷ ধ্বা যাক অজন্তা নেওগ বা গৌতম রায়ের কথা৷ দুজনেই কংগ্ৰেস আমলে দীৰ্ঘদিন মন্ত্ৰী ছিলেন৷ এখন তাঁরা যদি বিজেপিতে আসেন, তাহলে আমাদের ক্ষতি কী? আমাদের যদি কোনও লাভ না-ও হয়, তাঁরা তো বিজেপির কোনও ক্ষতি করতে পারবেন না৷
বাৰ্তালিপি : আচ্ছা এই যে দুজনের নাম আপনি নিলেন, এর মধ্যে গৌতম রায়ের বিদ্ধে একসময় আপনারাই দুৰ্নীতিবাজ অভিযোগ এনেছিলেন৷ রইল অজন্তা নেওগ, যিনি এই কিছুদিন আগেও সিএএ-র তুমুল বিরোধী ছিলেন৷ তো, এঁরা দলে এলে দলের পুরনো কৰ্মী বা নেতাদের মনোবল কোথায় নেমে আসতে পারে তা একবার বিজেপি নেতৃত্ব ভাববেন না?
রাজদীপ : হ্যাঁ, কিছু কিছু ক্ষেত্ৰে ক্ষোভ দেখা দেয়৷ মানছি৷ কিন্তু এমনও হয়, অন্য দল থেকে অনেক নেতা কৰ্মী আসেন যাঁদের আমাদের দলে মেনে নিতে কারোর কোনও আপত্তি হয় না৷ আসলে ওই নেতারা আগের দলে বেমানান ছিলেন৷ রাইট ম্যান ইন অ্যা রং পাৰ্টি৷ যেমন একসময় কংগ্ৰেসিরা অটলবিহারী বাজপেয়ীর কথা বলতেন৷ আসলে বাজপেয়ী নেহর অৰ্থনীতির সমৰ্থক ছিলেন৷ ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গেও তাঁর ভালো সম্পৰ্ক ছিল৷ আসলে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আরএসএস-এর খুব কাছের সম্পৰ্ক ছিল৷ ইন্দিরা গান্ধীর ওই সময় হিন্দুত্ববাদী অবস্থান ছিল৷ যাক সে অন্য কথা৷ আমরা অজন্তা নেওগ ও গৌতম রায়ের কথায় ফিরে আসি৷ সিএএ নিয়ে যাঁরা বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁদের অনেকেরই মোহভঙ্গ হয়েছে, তাঁরা বিজেপিতে আসছেন৷ আর গৌতম রায় দলের কারোর কোনও আপত্তি রয়েছে বলে মনে হয় না৷ গৌতম রায় আসার ফলে একটা অংশের ভোট আমরা পাব৷ তাছাড়া একটা কথা তো মানতে হবে, তিনি ত্ৰিশ বছর ধরে বিধায়ক, কুড়ি বছরের মন্ত্ৰী, অনেক অনেক মানুষকে সাহায্য করেছেন৷ বিশেষ করে চিকিৎসার ক্ষেত্ৰে৷ মানুষকে সাহায্যের ক্ষেত্ৰে দল-মত দেখেননি৷ দেখুন আমি কিন্তু গৌতম রায়ের পক্ষে ওকালতি করছি না, কিন্তু যেটা বাস্তব সেটাই তুলে ধ্বছি৷ তিনি দুই কেন্দ্ৰে কাজ করছেন, কোথায় টিকিট পান, বা আদৌ পান কি না, সেটা সময়ে দেখা যাবে৷ তবে, তাঁকে নিয়ে দলের মধ্যে ক্ষোভ থাকলে জানতে পারতাম৷
বাৰ্তালিপি : আপনি জাতিগত সমীকরণের কথা বলেছেন৷ রাজদীপ গোয়ালাকে দলে নেওয়ার কারণ কী? বাগানে তো বিজেপির প্ৰভাব বাড়ছে৷ এর মানে কি এই নয় যে রাজদীপ যেহেতু দীনেশপ্ৰসাদ গোয়ালার ছেলে, ফলে তাঁর বাগান ভোটে একটা প্ৰভাব রয়েছে৷ সেই ঘুরেফিরে পরিবারতন্ত্ৰ৷ এবং পরিবারতন্ত্ৰের অভিযোগ আপনার এবং সুস্মিতা দেব, দুজনের ক্ষেত্ৰেই ওঠে৷
রাজদীপ : আমার ক্ষেত্ৰে উঠলে ভুল ওঠে৷ সুস্মিতা দেবের সঙ্গে আমার এ ক্ষেত্ৰে পাথৰ্ক্য রয়েছে৷ সুস্মিতা তাঁর বাবা সক্রিয় রাজনীতিতে থাকা অবস্থায় রাজনীতিতে এসেছেন৷ আমি রাজনীতিতে এসেছি আমার বাবার মৃত্যুর পরে৷ রাজদীপ গোয়ালার ক্ষেত্ৰেও ছিক একই ছবি৷ এখন বাবার পরিচয় তো আমি বা রাজদীপ গোয়ালা মুছে ফেলতে পারব না৷ অনেক মানুষ এখনও আমাকে বিমলাংশু রায়ের ছেলে বলেই ডাকেন৷
বাৰ্তালিপি : সব মানলাম৷ কিন্তু তারপরও, বাগানে প্ৰভাব দিনদিন বাড়ার পরও আপনারা এমন একজনকে দলে নিতে বাধ্য হলেন যাঁর পরিবারের বাগান ভোটের ওপর প্ৰভাব রয়েছে৷ মেরিটোক্রেসি তাহলে কই গেল?
রাজদীপ: কে বলল রাজদীপ গোয়ালার মেরিট নেই৷ রাজদীপ অত্যন্ত মেধাবী৷ প্ৰশাসন বা রাজনীতি সম্পৰ্কে স্পষ্ট ধারণা আছে৷ ভীষণ বাস্তববাদী মানুষ৷ কোনও ধ্বনের ঔদ্ধত্য নেই৷ কী হয়, বাবা মন্ত্ৰী-টন্ত্ৰি থাকলে ছেলে-মেয়েরা অনেক সময় উদ্ধত হয়ে ওঠে৷ কিন্তু রাজদীপ খুব ভদ্ৰ৷ শিক্ষিত৷ আমার ব্যক্তিগত ধারণা, রাজদীপ দলে আসায় আমাদের লাভ হয়েছে৷ তবে কোনও পক্ষেরই বেশি আশা রাখা ঠিক নয়৷ রাজদীপেরও বিজেপির কাছে খুব বেশি প্ৰত্যাশা থাকা ঠিক নয়, বিজেপিরও তাঁর কাছে খুব বেশি প্ৰত্যাশা ঠিক৷ আফটার অল তিনি তো দলে নতুন৷
বাৰ্তালিপি: আপনাদের আরও একটি দাবি, সরকারের প্ৰচুর জনকল্যাণমূলক প্ৰকপ্লের অংশিদার হয়েছেন সব সম্প্ৰদায়ের মানুষ৷ কিন্তু তারপর ভোটের মুখে আপনারা মোগল, মিঞা সংস্কৃতি এসব শ্লোগান তুলছেন৷ পুরোপুরি সাম্প্ৰদায়িক মেকরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে৷ আমার প্ৰ, এতো উন্নয়নের পরও কি কোথাও বিজেপির ভেতরে আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়ে গেছে?
রাজদীপ : যেটা বলা হচ্ছে সেটি কিন্তু আংশিকভাবে ঠিক৷ আসলে কিছু ভয়ের বিষয় আমাদের মধ্যে উঠে আসছে৷ যেমন কেরালায় একটি জেলায় মুসলিমের সংখ্যা ৩৮ শতাংশ৷ সেখানে মুসলিমরা সাফ জানিয়ে দিয়েছে এই জেলায় হিন্দুদের পুজো করা য়াবে না৷ লেবানন একসময় খ্ৰিস্টান দেশ ছিল, এখন মুসলিম রাষ্ট্ৰ৷ সারা পৃথিবীতেই দেখা গেছে মুসলিমরা সংখ্যগরিষ্ঠ হয়ে গেলেই তারা সেখানে নিজেদের আইন নিজেদের সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে চায়৷ আসলে আমাদের দেশে প্ৰথম থেকেই এসবে প্ৰশ্ৰয় দেওয়া হয়েছিল৷ পাকিস্তানের মতো দেশে তিন তালাক নিষিদ্ধ৷ কিন্তু আমাদের দেশে নিষিদ্ধ করতে গেলে বলা হচ্ছে এটা শরিয়ত বিরোধী৷ আরে ভাই, শরিয়ত যদি এতোই মানতে হয় তাহলে কেউ চুরি করলে তার হাত কেটে ফেলে দেওয়া উচিত৷ অসমে হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা যে কথাটা বলছেন, সেটা কেন বলছেন? কখন বলছেন? বলছেন তখনই যখন মিঞা সংস্কৃতি মিঞা কবিতা এসব নিয়ে আওয়াজ তোলা হচ্ছে৷ এটা শংকরদেবের ভূমি, সেখানে তাঁরা যেভাবে নিজেদের সংস্কৃতি রক্ষা করতে চাইবেন, সেভাবেই তো করবেন৷ এতে ভুল কী আছে৷ ফলে আমার মনে হয় না, তাঁদের চিন্তাধারায় কোনও ভুল আছে৷ আরও একটা বিষয়ও আছে৷ ইতিহাস বলছে, মোগলরা অসমে আক্রমণ করেছিল৷ ব্ৰহ্মপুত্ৰ পারে মোঘলরা বাধা পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিল, না হলে তো আমাদের এদিকেও এসে যেত৷
বাৰ্তালিপি : কথাটা ঠিক এখানেই৷ আপনারা মোগলের কথা বলছেন ঠিকই, আবার মুসলিমদের মধ্যে আরেকটা ভাগ করে নিচ্ছেন৷ অসমিয়া মুসলিম, মানে গড়িয়া-মরিয়া৷ অন্যদিকে সিলেটি ও ময়মনসিঙের মুসলিম৷ মানে বাঙালি মুসলিম৷ এবং মোগল বলতে আপনারা বাঙালি মুসলিমদেরই ধরে নিচ্ছেন৷ আবার আপনি বলছেন, অসমিয়ারা খে দাঁড়িয়েছিল বলে মোগলরা এদিকে আসতে পারেনি৷ মানে মোগলের বংশধ্ব বরাকে নেই৷ আমার প্ৰ হল, বরাকে হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে মাঝেমধ্যে খুচখাচ রেষারেষি হয়, কিন্তু মোটামুটি একটা সম্প্ৰীতির পরিবেশ আছে৷ এখন আপনাদের এই মোগল ফৰ্মুলা বরাকের হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে সাম্প্ৰদায়িক মেকরণ কি আরও বাড়িয়ে দেবে না?
রাজদীপ : দেখুন আমি নিজে কোনওদিন মোগল শব্দটি উচ্চারণ করিনি৷ আরেকটা ব্যাপার কী, এই বিষয়টি অনেকটাই স্থান-কালের ওপর নিৰ্ভর করে৷ হ্যাঁ, বরাকে মোগল কোনও ইস্যু নয়৷ কিন্তু ব্ৰহ্মপুত্ৰ উপত্যকায় মোগলরা আক্রমণ করেছিল৷ মোগল মানে বাইরের মুসলিম৷ এখন সে আরবের না সিলেট-ময়মনসিঙের, সেটা তাঁদের কাছে অৰ্থহীন৷ মোগল মানেই বহিরাগত মুসলিম৷ অ্যাট লি তাঁদের কাছে৷
বাৰ্তালিপি : এই ‘তাঁরা’টা কারা?
রাজদীপ : তাঁরা মানে অসমিয়ারা৷
বাৰ্তালিপি : ও অসমিয়ারা৷ যাক গে, একটু শিলচরে আসি৷ একসময় আপনার বাবা ছিলেন বিধায়ক, সংসদে কবীন্দ্ৰ পুরকায়স্থ, পুরসভাও বিজেপির৷ এবারও তাই৷ কিন্তু এরপরের বার বিজেপি হেরে যায়৷ এর একটা বড় কারণ হচ্ছে শহরে পুর পরিষেবা বলতে কিছু ছিল না৷ এখনও তো একই ছবি৷
রাজদীপ : একটা কথা আমি অকপটে স্বীকার করে নিতে চাই যে, আমাদের মধ্যে যে সময় থাকার কথা ছিল, সেটা হয়ে ওঠেনি৷ এর জন্য কে দায়ী, কার ভুল, সেটা অন্য প্ৰ৷ কিন্তু ঘটনা হচ্ছে আমাদের মধ্যে সময় থাকা উচিত ছিল৷ এরপরও আমাকে বলতে হচ্ছে, মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবও অনেক দায়ী৷
বাৰ্তালিপি : আর একটা বিষয় হল ডি ভোটার৷ আপনি কি জানেন, অসমে এখন ডিটেনশন ক্যাম্পে যতজন বন্দি আছেন তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই হিন্দু বাঙালি৷ শিলচর জেলে যে চারজন বন্দি আছেন, চারজনের চারজনই হিন্দু৷ আপনি কী বলবেন?
রাজদীপ : কিন্তু অনেক ডি ভোটারই তো জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন৷
বাৰ্তালিপি : সে তো আদালতের নিৰ্দেশে৷ আদালত বলেছে, দু’বছরের বেশি কেউ ডিটেনশন ক্যাম্প থাকলে তাঁকে শৰ্তসাপেক্ষে জামিনে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে৷ এখনও যাঁরা ক্যাম্পে রয়েছেন, তাঁরা, বোঝাই যাচ্ছে, দু’বছর আগে তাঁদের সেখানে ঢোকানো হয়েছে৷ আমাদের প্ৰ হল, কেন্দ্ৰ সরকার তো সেই ২০১৫ সালে নোটিফিকেশন এনেছিল, তাহলে এরপরও কেন হিন্দু বাঙালিদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হল?
রাজদীপ : আদালতের এমন নিৰ্দেশ আছে কি? আমার ঠিক জানা নেই৷ খবর নিতে হবে৷
বাৰ্তালিপি : কেন্দ্ৰ ও রাজ্যে বিজেপির সরকার৷ এরপরও বাঙালি হিন্দুদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে৷ আপনার কি মনে হয় না, আপনারা, বিজেপির বাঙালি হিন্দু সাংসদ বা বিধায়ক, এতে কোথাও এটা প্ৰমাণ হয় না যে, এ ক্ষেত্ৰে দায়িত্ব পালনে আপনারা সফল হননি৷
রাজদীপ : হ্যাঁ, আমরা দায় এড়াতে পারি না৷ আমি স্বীকার করছি৷