মহাপুরুষ শ্রী শ্রী শঙ্করদেব
- বাসুদেব দাস
- - ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২১
(২২)
আধুনিককালের অসমিয়া মনীষার প্রতিভূ ডক্টর বাণীকান্ত কাকতি মহাপুরুষ শঙ্করদেবের আধ্যাত্বিক সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক অবদানের বিষয়ে সুন্দর বিশ্লেষণ করে গেছেন। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র এবং অধ্যাপক ছিলেন ডক্টর কাকতি । পঁচিশ বছর বয়স থেকে শঙ্করদেব এবং তার আনুষঙ্গিক সন্দর্ভে বিশদভাবে অধ্যয়ন করেছিলেন এবং বেজবরুয়ার সঙ্গে তখনই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। এই বিষয়ে তার অনুসন্ধিৎসা, ব্যাপক অধ্যয়ন এবং যুক্তি তথ্যের দ্বারা বিষয় বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল । ১৯২৩ সনে মাদ্রাজের' নটেশন কোম্পানি' ডক্টর কাকতির শঙ্কর চরিত্র প্রকাশ করেছিলেন। তার আগে এটি ইন্ডিয়ান রিভিউতে খণ্ড-খণ্ড করে প্রকাশিত হয়েছিল এরপরে প্রকাশিত গ্রন্থ The Mother Goddess Kamakhya গ্রন্থে শংকরদেব এবং নব বৈষ্ণব ধর্ম সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ভাবে হলেও উচ্চমত পোষণ করেছেন।
অসমিয়া সাহিত্যিক শঙ্করদেব এবং নব বৈষ্ণব দর্শন চর্চার ক্ষেত্রে ডিম্বেশ্বর নেওগ এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর যুগনায়ক শঙ্করদেব এই ধারার একটি উজ্জ্বলতম গ্রন্থ। ডক্টর নেওগ বলেছেন-' অসমিয়া সাহিত্য তথা অসমিয়া সংস্কৃতি সমাজ বা জাতি গঠনে শঙ্করদেবের স্থান নির্ণয় করতে যাওয়া বিড়ম্বনা এবং দুঃসাহস মাত্র। কারণ সূর্যকে যেভাবে তার আলো থেকে পৃথক রূপে কল্পনা করা বাতুলতা মাত্র তেমনই অসমিয়া সাহিত্য সংস্কৃতি সমাজ এবং জাতি শঙ্করদেবের প্রতিভার প্রতিবিম্ব বা প্রতিকৃতি মাত্র। অসমের সাংস্কৃতিক সৌরজগতে শংকরদেব যেভাবে সূর্য স্বরূপ মাধবদেব একইভাবে তাকে কেন্দ্র করে ঘোরা বিভিন্ন জ্যোতিষ্কের বৃহস্পতি স্বরূপ।'
ডিম্বেশ্বর নেওগ সমালোচকের দৃষ্টিতে বিচার করে শঙ্করদেবের রচনায় ক্লাসিকাল সৌন্দর্যের লক্ষণ এবং গরিমার আভাস পেয়ে সেই রচনা সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করেছেন। একটি প্রবন্ধে শ্রীনেওগ শঙ্করদেবের আন্দোলনকে অসমে প্রথম স্বাধীন চিন্তার ঢেউ বলে অভিহিত করে বুদ্ধদেবের জীবন এবং আদর্শের সঙ্গে শঙ্করদেবের তুলনা করেন। বুদ্ধ যেভাবে শাক্য বংশধর হয়েও পিতা শুদ্ধোধনের রাজ সিংহাসন পরিত্যাগ করেছিলেন , অসমে শঙ্করদেবও শিরোমণি ভূঞার রাজ্য সুলভ পৈতৃক ভূমি এবং বিশাল সম্পদ ও সম্পত্তির লোভ পরিত্যাগ করে সমাজের বঞ্চিত এবং সাধারণ মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
শ্রীনেওগ অসমিয়া ছাড়া ইংরেজি ভাষাতেও বিভিন্ন রচনায় শঙ্করদেব এবং মহাপুরুষীয় ধর্ম সাহিত্য সমাজের বিষয়ে চর্চা করে লিখে জীবন জোড়া সাধনার পরিচয় দিয়ে গেছেন। অসমিয়া সাহিত্যের প্রণালীবদ্ধ ইতিহাস নির্মাণে যেভাবে জীবনের অনেকটা সময় অতিবাহিত করেছেন ,ঠিক সেভাবেই মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের জীবন বৃত্ত,শঙ্করী কাব্য,নাট-গীত মহাপুরুষীয়া ধর্ম সমাজ আদি বিষয়ের চর্চাতেও শ্রীনেওগের জীবনের অনেকটা সময় ব্যয়িত হয়েছিল।তাঁর ‘যুগনায়ক শঙ্করদেব’গ্রন্থে আজীবন শঙ্করদেব চর্চা,নিবিড় অধ্যয়ন এবং একনিষ্ঠ অনুরাগের প্রতিফলন ঘটেছে।গ্রন্থটির পাঁচটি খণ্ডে শঙ্করদেব সম্বন্ধীয় বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে। এই গ্রন্থের পাঁচটি খণ্ড হল ১)প্রাচ্য জগতে ধর্মের ক্রমবিকাশ ২)উত্তর ভারতে নব জীবনের স্পন্দন ৩) শঙ্করদেব প্রচারিত ধর্মনীতি ৪) সমাজ সংঘটনে শঙ্করদেব ৫)মহাপুরুষীয়া ধর্মের বিশ্বজনীনতা।
অসমের জাতীয় ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক জীবনধারায় মহাপুরুষ শ্রীশঙ্করদেবের ভূমিকা চিরন্তনভাবে সর্বজন স্বীকৃত।অসমিয়া ভাষা -সাহিত্য-কৃ্ষটির গতি নির্ধারণ শঙ্করদেবের সৃষ্টিকে বাদ দিয়ে কোনো ক্ষেত্রেই অনুধাবন করা যায় না। যে সমস্ত ঐতিহাসিক,সাংস্কৃতিক,আধ্যাত্মিক আদি প্রসঙ্গ আধুনিক কালের অসমিয়া মানসকে অহরহ ক্রিয়াশীল করে রেখেছে সেইসবের মধ্যে মহাপুরুষ শঙ্করদেবের নেতৃ্ত্ব এবং সাংস্কৃতিক অবদান প্রধান।আজন্ম সংঘাত এবং সামাজিক বাধা অস্বীকার করে জীবনের প্রতিটি ক্ষণেই শঙ্করদেবের অসমিয়া জাতীয়ত্বের ভিত গড়ার জন্য অহোপুরুষার্থ করেছিলেন।