থাপ্পড়! ভিক্টোরিয়া কাণ্ডে মুখ খুললেন মমতা, ক্ষোভ নমো শিবিরেও
- বার্তালিপি ডেস্ক
- - জানুয়ারী ২৬, ২০২১
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজি জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সামনে তাঁর 'বেইজ্জতি' নিয়ে সোমবার ক্ষোভে ফেটে পড়লেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই ঘটনার প্রিয় ৪৮ ঘণ্টা পর এ দিন হুগলির পুরশুরার জনসভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে এ নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান তিনি। বলেন, 'এ তো ঘরে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে থাপ্পড় মারার শামিল, যা আমাদের ভদ্রতা ও শালীনতা বোধের সঙ্গে মেলে না।' তাঁর দাবি, ওইদিন নেতাজিকেও অপমান করা হয়েছে।
২৩ জানুয়ারি ভিক্টোরিয়ার ভরা সভায় অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। দর্শক আসন থেকে 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দেওয়ায় প্রতিবাদে বক্তৃতা না দিয়ে পোডিয়াম ত্যাগ করেন তিনি। বলেছিলেন, আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁকে 'বেইজ্জতি' করা হল। ওই ঘটনা নিয়ে এখনও সরগরম রাজ্য রাজনীতি। এ নিয়ে এ দিনই প্রথম প্রকাশ্যে মুখ খোলেন মমতা। পুরশুরার সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'বলুন তো আপনি আমাকে বাড়িতে ডাকলেন। তারপর কি বলবেন থাপ্পড় মারব, বেরিয়ে যাও! এটা আমাদের ভদ্রতা, শালীনতা নয়। নেতাজি আমাদের সবার নেতা। তাঁর প্রোগ্রামে গেলাম। এত সাহস! কতগুলো গর্ধ গদ্দার, উগ্র ধর্মান্ধ আমায় টিজ করল। দেশের প্রধানমন্ত্রী সামনেই।'
মমতা বলেন, 'এ তো নেতাজিকেও অপমান। রবীন্দ্রনাথকেও অপমান করেছে ওরা। না জেনে রবীন্দ্রনাথের জন্মস্থান বদলে দিয়েছে।বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে। এরপরই বলেন, 'আমাকে চেনো না। আমাকে বন্দুক দেখালে আমি বন্দুকের সিন্দুক দেখাব। রাজনীতি দিয়েই তোমাদের জবাব দেব।'
তবে ভিক্টোরিয়া অধ্যায় নিয়ে বিজেপি নেতারা বাইরে যাই বলুন, নেতাজি জয়ন্তীর ভাবগম্ভীর অনুষ্ঠানে যেভাবে ঘটনাটি ঘটে গেল তাতে অস্বস্তিতে পড়েছে গেরুয়া শিবিরও। বিজেপি সূত্রেই জনান্তিকে স্বীকার করা হয়েছে যে কার বা কাদের 'অপরিণামদর্শিতার' ফলে এমন ঘটনা ঘটল, তার বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে দলে। অভিযোগের কাঠগড়ায় রয়েছেন আপাতত যুবমোর্চার রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁ ও শঙ্কুদেব পণ্ডা। সূত্রের ইঙ্গিত, মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতা দিতে ওঠার মুহূর্তে 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান যে মোটেই 'আকস্মিক' বা 'স্বতঃস্ফূর্ত' ছিল না, তা দলের অভ্যন্তরীণ তদন্তে স্পষ্ট হয়েছে। পুরো ঘটনাটাই ছিল 'সুপরিকল্পিত'।
নেতাজি জয়ন্তীর ওই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে প্রচারের হাতিয়ার করাই ছিল বিজেপির পরিকল্পনা। কিন্তু অনুষ্ঠানের মাঝপথে মমতা ওইভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তৃতামঞ্চ ছাড়ায় প্রচারের আলো ঘুরে যায় অন্যদিকে। পোডিয়াম ছাড়লেও সৌজন্যবশত অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত মঞ্চেই বসেছিলেন মমতা। অন্যদিকে, মোদি তাঁর প্রায় আধঘণ্টার ভাষণে ওই ঘটনা নিয়ে একটি শব্দও ব্যয় করেননি। বিজেপি সূত্রের খবর, পুরো ঘটনাটি নিয়ে ক্ষুব্ধ আরএসএস-ও। সংঘের বক্তব্য, 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দেওয়া অন্যায় না হলেও ওইদিনের অনুষ্ঠানের গাম্ভীর্য ও গুরুত্বের সঙ্গে তা মানানসই ছিল না। অত্যুৎসাহে এই কাজ যারা করেছে তারা সংগঠনের ক্ষতিই করেছে।
বস্তুত, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের ওই অনুষ্ঠানের রাশ ওই দিন কার্যত চলে গিয়েছিল গেরুয়া বাহিনীর হাতে। জানা গিয়েছে, অনুষ্ঠানের দিন দুয়েক আগে থেকেই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছিল রাজ্য বিজেপির হেভিওয়েট নেতাদের। এমনকী 'ভিক্টোরিয়া চত্বরের একটি ঘরে কম্পিউটার বসিয়ে আমন্ত্রণ তালিকা তৈরির কাজও' চলেছিল বলে সূত্রের দাবি। প্রতিজন বিজেপি সাংসদের হাতে তো বটেই, সেই সঙ্গে পার্টি অফিসে পৌঁছে গিয়েছিল গোছা গোছা আমন্ত্রণপত্র। ফলে ওইদিনের অনুষ্ঠানে দর্শক আসনে অনেকটাই চলে গিয়েছিল জেলা ও মণ্ডল স্তরের বিজেপি নেতা-কর্মীদের দখলে। সূত্রের দাবি, ভিক্টোরিয়ার অনুষ্ঠানস্থলে ওইদিন ছিলেন বিজেপির অন্তত ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবী। দল এ নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটলেও বিজেপি যুব মোর্চার সদস্য তথা টেলি অভিনেত্রী রিমঝিম মিত্র সংবাদ মাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন, দলের অনেকের সঙ্গে দর্শকদের সামলানোর দায়িত্বে ছিলেন তিনিও।