জল স্বচ্ছ রাখতে নদী-বিলে অভিযান জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মুন্নির
- এরশাদ উদ্দিন তাপাদার
- - জানুয়ারী ৯, ২০২১
"স্বচ্ছ বরাক, সুস্থ বরাক" বলে শুধু মুখে শ্লোগান দিলে হবে না। বরাক নদীকে স্বচ্ছ রাখতে হলে সুস্থ মানসিকতারও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন করিমগঞ্জ জেলার ভাঙ্গা অঞ্চলের সমাজসেবী মুন্নি ছেত্রী। আর্থিক অনটনের জন্য মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। স্নাতক কোর্স সম্পূর্ণ করতে পারেননি। তারপর প্রাইভেট টিউশন করে পরিবারের ভরণ পোষণের দায়িত্ব নেন তিনি। টিউশনের সাথে সাথে নিজেকে সমাজসেবায় জড়িয়ে নেন মুন্নি। সমাজসেবায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে গত বছর সেপ্টেম্বরে দিল্লির ভারতীয় সমতা সমাজ বছরের শ্রেষ্ঠ সমাজসেবীদের অন্যতম একজন হিসেবে মুন্নিকে জাতীয় পুরষ্কার "সমতা অ্যাওয়ার্ড ২০২০"এ সম্মানিত করে।
বরাক নদীর জলকে স্বচ্ছ রাখতে "স্বচ্ছ বরাক সুস্থ বরাক" অভিযানের অঙ্গ হিসাবে মুন্নি ছেত্রী বরাক নদীকে স্বচ্ছ করতে নিজের হাত লাগান। বরাক নদীকে পরিষ্কার রাখতে মুন্নি প্রতিদিন রুটিন মাফিক নদী থেকে প্লাস্টিক, নোংরা আবর্জনা, পচা গলা পশু পাখির মৃতদেহ ইত্যাদি উদ্ধার করেন। বরাক নদী ছাড়াও মুন্নি কুশিয়ারা নদী পরিস্কারের কাজেও ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি রোজ পাঁচ ছয় ঘণ্টা করে নদী সাফাইয়ের কাজ করেন। সমাজসেবী মুন্নি বলেন, শুধু ঘটা করে নমামি বরাক অনুষ্ঠান করলে হবে না। বরাক নদীর জলকে পরিষ্কার রাখতে সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মুন্নি আরও বলেন,সবাই যদি নিজের বাড়ির আবর্জনা নদীতে না ফেলে একটি গর্ত করে পুতে রাখেন এবং পরে জ্বালিয়ে দেন তখন আর নদীর জল নষ্ট হবে না। কারণ জলের অপর নাম জীবন। পরিষ্কার জল মানুষ পান না করলে বিভিন্ন মারাত্মক রোগ দেখা দেবে। তিনি গত তিন মাসে প্রায় ১০ থেকে ১২ কুইন্টাল আবর্জনা জমা করেছেন বলে জানান। সেগুলি তিনি পুড়িয়ে ফেলেন কিংবা মাটিতে পুঁতে দেন।
এদিকে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাশয় শনবিলের সংরক্ষণের জন্যও এগিয়ে আসেন বছর ছাব্বিশের এই তরুণী। "স্বচ্ছ বরাক, সুস্থ বরাক" অভিযানের ভিত্তিতে সম্প্রতি বরাকের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র শনবিলে অভিযান চালান মুন্নি। নিজের অনুভূতি সম্পর্কে মুন্নি বলেন, বিশাল জলাশয় শনবিল একটি পর্যটন কেন্দ্র। যেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ ঘুরতে আসেন এবং পিকনিক করতেও আসেন, যা বরাকের এক গৌরব। এই পর্যটন কেন্দ্রটি উদাসীনতার ফলে এগিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। নিজের অভিযানে শনবিলের চারদিকের বিভিন্ন আবর্জনা, প্লাস্টিকের বোতল,থালা বাটি,পচা নষ্ট ভাত,মৃত মুরগির মাথা ইত্যাদি পরিষ্কার করেন। এ প্রসঙ্গে দূষণমুক্ত শনবিলকে গড়ে তুলতে মুন্নি বরাকের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, জনগণ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তিনি পর্যটকদের যেখানে সেখানে আবর্জনা না ফেলে এক জায়গায় জমিয়ে রাখার আর্জি জানান।
বরাকের জল স্বচ্ছ ও সুন্দর থাকলে বরাকবাসীও সুস্থ থাকবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন মুন্নি। এদিকে মুন্নির এই প্রশংসনীয় উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বরাকের বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী মহল। মুন্নির একার পক্ষে এই অভিযানে সাফল্য পাওয়া কঠিন। এজন্য যেমন টিমওয়ার্ক জরুরি, তেমনি সমাজের সচেতনতাও একান্ত প্রয়োজন।