সরগরম ভোটবাজার ! বাংলায় পা দিয়েই শরিফে রুদ্ধদ্বার বৈঠক ওয়েইসির
- বার্তালিপি ডেস্ক
- - জানুয়ারী ৪, ২০২১
নতুন বছরের প্রথম রবিবারের শীত সকালে হায়দরাবাদের ঝোড়ো বাতাসে সরগরম হয়ে উঠল বাংলার নির্বাচনমুখী রাজনীতি। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে চোখ রেখে এদিন সকালেই কলকাতায় পৌঁছে যান অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল বা মিম-এর সুপ্রিমো অসাদুদ্দিন ওয়েইসি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, দমদম বিমানবন্দরে নেমেই ওয়েইসি সোজা চলে যান ফুরফুরা শরিফে। সেখানে পীরজাদা আব্বাস উদ্দিন সিদ্দিকির সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকের পর মিম সভাপতি জানিয়ে দেন, বাংলার অসন্ন নির্বাচনে আব্বাস উদ্দিনের পিছনেই থাকবে মিম। মিম-এর পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে আব্বাসের সঙ্গে। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তিনিই নেবেন। যা নির্দেশ দেওয়ার তিনিই দেবেন। তা মেনে চলবে মিম। অর্থাৎ বাংলায় ভোটের আগে যদি নজিরবিহীনভাবে সংখ্যালঘু মহাজোট গড়ে ওঠে তাহলে তার মুখ যে আব্বাস সিদ্দিকই হবেন, সেই বার্তাই এদিন স্পষ্ট করে দিলেন ওয়েইসি।
বিহার নির্বাচনে পাঁচটি আসন দখল করার পর মিম প্রধান ওয়েইসি জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর পরবর্তী মিশন বাংলা। তিনি খুব শীঘ্রই রাজ্য সফরে আসছেন বলেও জানা গিয়েছিল। কিন্তু এদিন কলকাতায় পা দিয়েই সরাসরি ফুরফুরা শরিফে গিয়ে আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে দেখা করে বড় চমক দিয়ে দেন ওয়েইসি। ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকির ভাইপো আব্বাস সিদ্দিকি গত কয়েকদিন ধরেই নিজের দল গড়ে ভোটে লড়ার কথা বলে আসছিলেন। তাঁর আহলে সুন্নাতুল জামাত মঞ্চের ব্যানারে ভাঙড়-সহ বেশ কয়েক জায়গায় সভাও করেন। নিজের দল গড়ে একশোরও বেশি আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করে আসছিলেন আব্বাস সিদ্দিকি। কিন্তু মিম-এর সঙ্গে তাঁর যে সমীকরণ এদিন প্রকাশ্যে এল, তা বাংলার ভোটের অঙ্কে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ওয়েইসি আব্বাস উদ্দিনের সঙ্গে হাত মেলালে শাসকদল তৃণমূলের কাছে তা এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। তৃণমূল অবশ্য প্রকাশ্যে ওয়েইসির এই সফরকে গুরুত্ব না দিলেও বাংলার সংখ্যালঘুদের কাছে ওয়েইসিকে বয়কট করার ডাক দিয়েছে। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় এদিন বলেন, 'ওয়েইসি বিজেপির হয়ে ভোট কাটার কাজ করেন। অমিত শাহর নির্দেশে চলেন উনি। বাংলার সংখ্যালঘু মানুষ ওয়েইসির বিভাজনমূলক রাজনীতিকে সমর্থন করবেন না।' বিহারের ভোটে যে পাঁচ আসনে জিতেছে ওয়েইসির মিম, তার চারটিই পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সংলগ্ন। এ নিয়েও চিন্তিত নন সৌগত। তিনি বলেন, ওগুলো সব উর্দুভাষী মুসলিম অধ্যুষিত কেন্দ্র। তিনি বলেন, 'ওয়েইসি বুঝেছেন, বাংলায় তিনি কোনও প্রভাব ফেলতে পারবেন না, কেননা বাংলায় উর্দুভাষী মুসলমানের সংখ্যা কম। তাই আব্বাস সিদ্দিকির হাত ধরতে গিয়েছেন তিনি। তবে এতও কোনও লাভ হবে না। কেননা, বাংলায় সংখ্যালঘুরা নিরাপদে আছে, ভালো আছেন। তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গেই থাকবেন।'
বাংলায় ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট নির্বাচনে অন্যতম ফ্যাক্টর। ওয়েইসি বলেন, মিম রাজনৈতিক দল। তাই নির্বাচন লড়বে। আব্বাস উদ্দিনের নেতৃত্বে ভোট লড়ব আমরা।' তবে কি আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে জোট করেই তিনি ভোট লড়ার পথে এগোচ্ছেন? নাকি আব্বাস নিজেই মিম-এ যোগ দিতে চলেছেন? এ প্রশ্নে ওয়েইসি জানিয়ে দেন, সব প্রশ্নের উত্তর এবার আব্বাস উদ্দিনই জানিয়ে দেবেন।'
তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের বিজেপির বি টিম আখ্যা দিয়েছেন। এর পাল্টা ওয়েইসি বলেছেন, 'সংখ্যালঘুদের নিয়ে যদি এতই চিন্তা, তাহলে গুজরাট যখন দাঙ্গায় জ্বলছিল, তখন মমতা কোথায় ছিলেন? তৃণমূল থেকে এত লোক বিজেপি যাচ্ছেন, তাঁদেরই বা আটকাতে পারছেন না কেন?' তাঁর বক্তব্য, 'গত লোকসভা নির্বাচনে মিম ছিল না, তবু বিজেপি ১৮ টা আসন জিতেছিল, একথা তিনি যেন ভুলে না যান।'
ডিসেম্বরে রাজ্যের চার জেলা থেকে মিম-এর প্রায় জনা চব্বিশ নেতা হায়দরাবাদে গিয়ে ওয়েইসির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই সময়ই ওয়েইসি জানিয়ে দেন, সংগঠনের কাজ এবং বিভিন্ন সংখ্যালঘু জেলায় দলের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে তিনি বাংলা সফরে আসবেন। কিন্তু বাংলায় পা দিয়েই যে তিনি আব্বাস সিদ্দিকির মতো বাংলাভাষী সংখ্যালঘু নেতার সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতেই লড়াইয়ের ব্যাটন তুলে দেবেন, তা আগেভাগে ঘূণাক্ষরেও টের পাওয়া যায়নি। গত লোকসভা ভোটের পর থেকেই মালদা, মুর্শিদাবাদ-সহ উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা এবং দক্ষিণবঙ্গের দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলিতে সংগঠন গড়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে মিম।