জমি ছাড়তেই হবে মিজোরামকে, প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ
দখল করা অসমের জমি ছাড়তেই হবে মিজোরামকে। অসমের জমি ছাড়তে বাধ্য মিজোরাম। জমি উদ্ধারে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে অসম সরকার। মিজো দুষ্কৃতীদের হাতে মৃত লায়লাপুর ফ্রেঞ্চনগরের বাসিন্দা ইন্তাজ আলি লস্করের বাড়িতে দাঁড়িয়ে মঙ্গলবার জোর গলায় একথাই বলেন রাজ্যের মুখ্য সচিব জিষ্ণু বরুয়া।
এদিন শিলচর বিমানবন্দর থেকে সোজা লায়লাপুর ফ্রেঞ্চনগরে মৃত ইন্তাজ আলি লস্করের বাড়িতে যান মুখ্য সচিব জিষ্ণু বরুয়া ও রাজ্য পুলিশের ডিজিপি ভাস্করজ্যোতি মহন্ত। বাড়িতে পৌঁছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ৫ লক্ষ টাকার চেক অনুদান হিসেবে তুলে দেন মৃতের বাবার হাতে। এবং মৃতের বাড়িতে দাঁড়িয়েই মুখ্য সচিব স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, এটা ঠিক যে আমরা আমাদের প্রতিবেশী কে বা কারা হবে তা ঠিক করতে পারিনা। কিন্তু অসমের সীমানা সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। ফলে আমাদের এক ইঞ্চি জমিও দখল করতে পারবেনা মিজোরাম। গোটা বিষয়টি রাজ্যের গৃহ মন্ত্রকের মাধ্যমে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। গৃহ মন্ত্রী নিজে এতে হস্তক্ষেপ করেছেন। খুব শীঘ্রই মিজোরামের সঙ্গে সীমানা বিবাদ নিয়ে আমরা স্থায়ী সমাধানের পৌঁছাবো।
এখানেই না থেমে, মুখ্য সচিব বরুয়া আরও বলেন, আমরা এখনো চাইছি, মিজোরাম সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে শান্তি সম্প্রীতির মাধ্যমে সীমানা বিবাদের সমাধান হোক। কিন্তু বারবার শান্তি আলোচনার আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনো পর্যন্ত অসমের জমি থেকে সরে যায়নি মিজো পুলিশ বাহিনী। ফলে শান্তি আলোচনা ও আশ্বাসে আর কাজ হবে কি? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়ে দেন, শান্তি আলোচনায় কাজ না হলে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
একই সঙ্গে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার মাধ্যমে ইন্তাজ আলি লস্করের মৃত্যুর তদন্ত হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যের দুই শীর্ষ আধিকারিক। এদিকে রাজ্য পুলিশের ডিজিপি ভাস্করজ্যোতি মহন্ত সাংবাদিকদের বলেছেন যে কোনো মূল্যে অসমের প্রতি কোনও অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না। রীতিমতো ক্ষোভের সুরে তিনি বলেছেন অসম্পূর্ণ এখনোও যথেষ্ট ধৈর্য নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু রাজ্যের নিরাপত্তার প্রশ্নে সেই ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে এক মুহূর্ত সময় লাগবে না। ভাস্করজ্যোতি মহন্ত বলেছেন, অসম সীমান্তে মিজো আগ্রাসন নিয়ে দফায় দফায় কথা চলছে কেন্দ্রের সঙ্গে। কথা চলছে ইন্তাজুলের মৃত্যুর তদন্ত করার বিষয়েও। সোমবারও কেন্দ্রীয় গৃহসচিব এর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন মুখ্য সচিব। ফলে ঐক্যবদ্ধভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে অসমের জমি আগ্রাসন মুক্ত করবেই রাজ্য পুলিশ।
এদিন সকালে মিজোরাম সরকারের তরফে সশস্ত্র জওয়ানরা অসম পুলিশের হাতে ইন্তাজুল আলি লস্করের মৃতদেহ সমঝে দেওয়া হয়। অসমের পক্ষে মৃতদেহ সঙ্গে নেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জগদীশ দাস। ছিলেন ধলাই এর সার্কেল অফিসারও। মৃতদেহ সন্ধি পাঠিয়ে দেওয়া হয় শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য। ময়নাতদন্তের পর সন্ধ্যে নাগাদ কড়া পুলিশি প্রহরায় মৃতদেহ শুনছে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। অন্যদিকে লায়লা পুরের অফ মিজোরাম সীমান্তে এদিন সকাল থেকেই ছিল টানটান উত্তেজনা। ইন্তাজুল আলী লস্করের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে লালপুরে অবরোধ করে তোলেন উত্তেজিত জনতা। যদিও সকাল থেকেই নিরাপত্তারক্ষীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখেন। বিকেলে মুখ্যসচিব সহ শীর্ষ আধিকারিকদের দল লায়লা পুর থানা এলাকা বেরোনোর সময় উত্তেজিত জনতা মিজোরাম গো ব্যাক স্লোগান দেন। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য ও শিলচরের সাংসদ ডা: রাজদীপ রায়।