তাজ উদ্দিন : শিলচর, ১১ সেপ্টেম্বর : অসমের প্ৰথম ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার (আইএম) হয়েছেন খুদে দাবাড়ু সাহ
তাজ উদ্দিন : শিলচর, ১১ সেপ্টেম্বর : অসমের প্ৰথম ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার (আইএম) হয়েছেন খুদে দাবাড়ু সাহিল দে৷ খবরটা মোটেও আর নতুন নয়৷ ২০২১-র ফেব্ৰুয়ারিতে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল যে কিছুদিনের মধ্যে আইএম হতে চলেছেন সাহিল৷ ১৪ জুন অফিশিয়ালি আইএম হয়ে যান বছর চোদ্দর এই দাবাড়ু৷ জুলাইয়ে সাহিলের আইএম হওয়ার খবরটি ট্যুইট করে তাঁকে অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা৷ কিন্তু এই ট্যুইট আর অভিনন্দন ছাড়া এ পৰ্যন্ত কিছুই জোটেনি সাহিলের৷ যার ফলে খুবই হতাশ এই খুদে দাবাড়ুর বাবা সঞ্জয় দে৷ নিজেই ফোন করে বললেন, ‘ট্যুইটে আমার পেট ভরেনি৷ আমার ছেলের কোচিংয়ের ক্ষেত্ৰেও লাভ হয়নি৷ আশা করেছিলাম সাহিলের জন্য কোনও আৰ্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে৷ এমনকি ৩ সেপ্টেম্বরের ক্রীড়া পেনশন দিবসের ঘোষণায়ও অনুচ্চারিত থাকল অসমের প্ৰথম আইএম হওয়া ছেলেটি৷’
নিজের টাকা-পয়সা-সম্পত্তির সবকিছু একমাত্ৰ ছেলের পিছনে ঢেলে দিচ্ছেন সঞ্জয়বাবু৷ এমনকি সাহিলের উন্নত কোচিংয়ের জন্য গুয়াহাটির খ্ৰিস্টানবস্তির বাড়ি বদলে আপাতত কলকাতায় থাকছেন৷ সেখানে কাজ নিয়েছেন৷ কিন্তু নিজের উপাৰ্জন দিয়ে ছেলেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন৷ ইন্টারন্যাশনাল মাস্টারে ছেলেকে আটকে রাখতে নারাজ তিনি৷ তাঁর লক্ষ্য সাহিলকে গ্ৰ্যান্ডমাস্টার পৰ্যন্ত পৌঁছে দেওয়া৷ কিন্তু খরচের বহর তাঁকে প্ৰতিনিয়ত চিন্তায় রাখছে৷ ছেলের প্ৰতিভা মাঝপথে দমে যাক, এমনটা হতে দিতে চান না তিনি৷
পাঁচ বছর বয়স থেকে দাবা খেলা শুরু করেছেন সাহিল৷ আর, গত দু বছর থেকে উন্নত মানের কোচিং নিচ্ছেন তিনি৷ এর মধ্যে রক্তিম ব্যানাৰ্জির কোচিং ছাড়াও জ্যাকব অ্যাগাৰ্ড পরিচালিত কিলার চেস অ্যাকাডেমিতেও প্ৰশিক্ষণ নিয়েছেন৷ এই দুই বছরে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে৷ এই অৰ্থ জোগাড় করতে মাইনের টাকা ছাড়াও ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙেছেন সঞ্জয়বাবু৷ স্ত্ৰী মিঠু দেবীর সোনার গয়নাও বিক্রি করেছেন৷ আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতা নিয়েছেন৷ এর বাইরে দিল্লির এক শুভানুধ্যায়ী ৫০ হাজার করে দু’বারে এক লক্ষ টাকা দিয়েছেন৷ আরও ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন অল ইন্ডিয়া চেস ফেডারেশনের সভাপতি ডঃ সঞ্জয় কাপুর৷
চেসবেস ইন্ডিয়ার একটা স্কলারশিপ পেয়েছিলেন সাহিল৷ ৫০ হাজার টাকা৷ এছাড়া আরও হাজার পঞ্চাশেক এসেছে প্ৰাইজমানি থেকে৷ কিন্তু যখন আৰ্থিক দৈন্যদশা গ্ৰাস করে সেই সময় এই এক লক্ষ টাকা মোটেও বড় প্ৰাপ্তি নয়৷ অসম রাজ্য সরকারের তরফে অতীতে দু’বার ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান পেয়েছিলেন সাহিল৷ ২০১৮-১৯ এর পর সেই দরজাও বন্ধ করে দেয় পূৰ্বতন সৰ্বানন্দ সনোয়াল সরকার৷ সৰ্বানন্দ যখন ক্রীড়ামন্ত্ৰী ছিলেন, সেই সময় তাঁর কাৰ্যালয়ে গিয়েও হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছিল বলে আক্ষেপের সঙ্গে জানালেন সঞ্জয় দে৷ ফলে, বন্ধ অনুদান নতুন করে চালু করার ব্যাপারটাও এগোয়নি৷ গত ৩ সেম্বের যাঁদের ক্রীড়া পেনশন দেওয়ার ঘোষণা করা হল, সেই তালিকায় সাহিলের নাম থাকলে অন্তত মাসে দশ হাজার টাকা করেও আৰ্থিক অনুদান পেতেন৷ কিন্তু সাহিল উপেক্ষিত থাকায় হতাশা গোপন রাখলেন না তাঁর বাবা৷
বাকি থাকল সারা অসম দাবা সংস্থা৷ সাহিল এখন যাদের জন্য গৰ্ব করার মতো সম্পত্তি৷ সাহিলের জন্য তারা কতটা কী করেছে? ‘কিছুই না৷ এমনকি একজন পেশাদার খেলোয়াড়ের সঙ্গে কী ধ্বনের ব্যবহার করতে হয়, সেটাও ওদের জানা নেই৷ যে খেলোয়াড়টি সংস্থার গৌরব বাড়িয়ে দিল, তাকে সহযোগিতা করার ব্যাপারেও তাদের কোনও উদ্যোগ নেই৷’ বেশ রাগের সঙ্গেই কথাগুলো বলেন সঞ্জয়বাবু৷ ছেলের জিএম হওয়ার স্বপূরণে তিনি এখন স্পনসরের খোঁজে রয়েছেন৷ বললেন, কেউ যদি সহযোগিতার হাত বাড়ায় তাহলে তিনি কৃতজ্ঞ থাকবেন৷
সাহিলের সেরা রেটিং ২৪৩৪৷ তবে এখন সামান্য পড়ে গিয়ে ২৩৯৮-এ নেমে এসেছে৷ এনিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন সঞ্জয়বাবু৷ তিনি চাইছেন, সাহিলকে দেখে অসমের দাবাড়ুরা উৎসাহ পাক৷ কিছুদিন আগে বরাক উপত্যকা ক্রীড়া সাংবাদিক সংস্থার কাছাড় জেলার বৰ্ষসেরা অনুষ্ঠানের ছবি আর রিপোৰ্টিংও দেখেছেন তিনি৷ খুদে দাবাড়ু অভ্ৰজ্যোতি নাথ ‘সেরার সেরা’ মনোনীত হওয়ায় তাকে অভিনন্দনও জানালেন৷ অভ্ৰজ্যোতিদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতও কামনা করেন তিনি৷