ভাবিনাবেনের রুপো দিয়ে ক্রীড়া দিবসের
শিলচর : আজ ২৯ আগস্ট৷ হকির জাদুকর মেজর ধ্যানচাঁদের জন্মদিন৷ ভারতের জাতীয় ক্রীড়া দিবস৷ এই দিনেই রাষ্ট্ৰপতি অৰ্জুন, দ্ৰোণাচাৰ্য পুরস্কার তুলে দেন ক্রীড়াজগতে দেশের কৃতিদের হাতে৷ হকির জাদুকরকে সম্মান জানাতে কিছুদিন আগেই রাজীব গান্ধী খেলরত্ন পুরস্কারের নতুন নামকরণ করা হয়েছে৷ দেশের সৰ্বোচ্চ ক্রীড়া পুরস্কারের নতুন নাম মেজর ধ্যানচাঁদ খেলরত্ন পুরস্কার৷ প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদি সেই ঘোষণা করেন গত ৬ আগস্ট৷ তবে এবছর জাতীয় ক্রীড়া দিবসে কিন্তু ক্রীড়া পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে না। এরপরও এই সুপ্ৰভাতে রচিত হচ্ছে এক গৌরবময় অধ্যায়৷ হ্যাঁ, ভারতের খেলাধূলা, বিশেষ করে টেবিল টেনিসের জন্য এক স্মরণীয় দিন৷ আজ প্যারালিম্পিকের পদক গলায় পরে নিলেন মহিলা প্যাডলার ভাবিনাবেন প্যাটেল৷ তৈরি হল এক গৌরবময় অধ্যায়৷
টোকিও অলিম্পিক শেষ হয়েছে গত ৮ আগস্ট৷ এতে সাতটি পদক জিতে ইতিমধ্যে ঐতিহাসিক নজির গড়েছে ভারত৷ ফলে, টোকিওর সফল অ্যাথলিটরা অবশ্যই ক্রীড়া পুরস্কারে ভূষিত হবেন৷ লভলিনা বরগোঁহাই, নীরজ চোপড়াদের খেলরত্ন হওয়া এক রকম নিশ্চিত৷ তবুও সরকার পুরস্কার জয়ীদের নাম ঘোষণা করেনি৷ কেন করেনি, সেটা অনেকের কাছে বড় কঠিন প্ৰশ্ন৷ আর, অনেকে সেই ব্যাপারে পুরো ওয়াকিবহাল৷ ২৪ আগস্ট শুরু হয়েছে টোকিও প্যারালিম্পিক৷ প্ৰতিবন্ধী বা বিশেষভাবে সক্ষমদের এই অলিম্পিকে ভারত ৫৪ জন প্ৰতিযোগী পাঠিয়েছে৷ তাঁদের সাফল্য কামনায় প্ৰাৰ্থনা করছে ক্রীড়ামহল৷ আর, সরকারও চাইছে একই মঞ্চে প্যারা স্পোৰ্টসম্যানদের সম্মান জানাতে৷ তাই আটকে রয়েছে ক্রীড়া পুরস্কারের নাম ঘোষণা৷
তা বলে কি, শুকনোভাবে কাটবে ভারতীয় ক্রীড়ার কিংবদন্তি ধ্যানচাঁদের জন্মদিন? অনেকের সেটা মনে হলেও ভাবিনাবেনের ভাবনা ছিল অন্য রকম৷ অলিম্পিকের টেবিল টেনিসে কোনও পদক জেতার নজির নেই ভারতের৷ সেখানে আজ প্যারালিম্পিকের ফাইনালে নামলেন তিনি৷ চিনের ঝৌ ইংয়ের বিরুদ্ধে তিনি বোৰ্ডে ঝড় তুললেও রুপো নিয়েই সন্তুষ্ট থাকলেন। একটা রৌপ্যপদক ভারতের জন্য কম বড় প্রাপ্তি নয়।
আজ ফাইনাল খেলার আগে চিনের আরেক প্যাডলার মিয়াং জাও-কে শনিবার পাঁচ সেটে হারিয়েছেন ভাবিনাবেন৷ অথচ এর আগে এই প্ৰতিদ্বন্দ্বীর কাছে এগারোবার পরাজিত হয়েছেন তিনি৷ ২৯ তারিখের সাতসকালে রুপোর পদকের খবর দেওয়ার জন্যই তিনি শনিবার দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে শেষ লড়াইয়ে উঠে এসেছিলেন৷ আজই এবারের প্যারালিম্পিকের পদকের খাতা খুলল ভারত৷ ধ্যানচাঁদের জন্য এর চেয়ে ভাল জন্মদিনের উপহার কী হতে পারে?
এবার দেখে নেওয়া যাক মেজর ধ্যানচাঁদকে নিয়ে জানা-অজানা নানা তথ্য ও ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্ৰে তাঁর অবদান সম্পৰ্কে৷ উত্তরপ্ৰদেশের এলাহাবাদে (বৰ্তমান নাম প্ৰয়াগরাজ) ১৯০৫ সালের ২৯ আগস্ট জন্ম হয় ধ্যানচাঁদের৷ ব্ৰিটিশ ইন্ডিয়ান আৰ্মির হয়ে হকি খেলেছিলেন ধ্যানচাঁদের পরিবারের সদস্যরা৷ বাবা সোমেশ্বর সিংহ সেনাবাহিনিতে চাকরি করতেন৷ মাত্ৰ ১৬ বছর বয়সে ১৯২২ সালে ব্ৰিটিশ ইন্ডিয়ান আৰ্মিতে যোগ দিয়েছিলেন ধ্যান সিং৷ সময়ের অভাবে রাতের দিকে অনুশীলনে মগ্ন থাকতেন কিংবদন্তি এই হকি তারকা৷ এজন্যই সতীৰ্থরা ‘চাঁদ’ নামে সম্বোধন করতেন ধ্যান সিংকে৷ পরে ধ্যানচাঁদ নামেই পরিচিতি পেয়ে যান তিনি৷ কৰ্মজীবনে তিনি পঞ্জাব রেজিমেন্টের মেজর পদে উন্নীত হয়েছিলেন৷
১৯৩২ সালে গোয়ালিয়রের ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে স্নাতক উত্তীৰ্ণ হন ধ্যানচাঁদ৷ ইংরেজদের অধীনস্ত ভারতীয় হকি দলের হয়ে ১৯২৮, ১৯৩২ ও ১৯৩৬ অলিম্পিক খেলেন তিনি৷ প্ৰতিবারই সোনা জেতে ভারত৷
১৯২৬ সাল থেকে ১৯৪৯ পৰ্যন্ত বিস্তৃত কেরিয়ারে ১৮৫ ম্যাচে ৫৭০টি গোল করেন৷ ১৯৫৬ সালে তিনি পদ্মভূষণ সানে ভূষিত হন৷ ১৯২৮ সালের আমস্টারডাম অলিম্পিকে সৰ্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন ধ্যানচাঁদ৷ সেবারই হকির জাদুকর হিসেবে নামকরণ হয় ধ্যানচাঁদের৷ ১৯৩২ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকের একটি ম্যাচে আমেরিকাকে ২৪-১ গোলে হারিয়েছিল ভারত৷ সেই রেকৰ্ড ২০০৩ সাল পৰ্যন্ত অক্ষত ছিল৷ ম্যাচে ৮ গোল করেছিলেন ধ্যানচাঁদ৷ তাঁর ভাই রূপ সিং করেছিলেন ১০ গোল৷ অন্য ম্যাচে জাপানকে ১১-১ গোলে হারায় ভারত৷ আসরে দু ভাই মিলে করেছিলেন ২৫ গোল৷
১৯৩৪ সালের নিউজিল্যান্ড সফরে অধিনায়ক নিৰ্বাচিত হয়েছিলেন ধ্যানচাঁদ৷ সেবার ২৩ ম্যাচে ২০১টি গোল করেছিলেন তিনি৷ শোনা যায়, জাৰ্মান শাসক হের হিটলার ধ্যানচাঁদের খেলা দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তাঁকে জাৰ্মান নাগরিকত্ব দিতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু তা নিতে অস্বীকার করেন ধ্যানচাঁদ৷
১৯৫৬ সালে ৫১ বছর বয়সে ক্লাব স্তরের হকি থেকে অবসর নেন ধ্যানচাঁদ৷
জীবনের শেষ সময়টা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ধ্যানচাঁদ৷ ১৯৭৯ সালের ৩ ডিসেম্বর নতুন দিল্লির এইমসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি৷ মূলত তাঁর হাত ধরেই ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গন আন্তৰ্জাতিক মঞ্চে পরিচিতি লাভ করে৷ শুধু হকি নয়, সব ধ্বনের খেলোয়াড়রাই আজ ধ্যানচাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত৷